চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের গহীন জঙ্গলে জেএমবি ঘাঁটি

ডেস্ক রিপোর্ট • রবিবার রাতে ঢাকার সাইদনগর থেকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর ‘বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের’ আমির আবু রায়হান ওরফে মাহমুদ ওরফে হাদী। তার সঙ্গে হাবিবুর রহমান ওরফে চাঁন মিয়া ও রাজিবুর রহমান ওরফে রাজিব ওরফে সাগর নামের আরও দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) দল। গ্রেপ্তারের সময় তাদের হেফাজতে থাকা ১৫০টি ডেটোনেটর, জিহাদি বই, একটি কমান্ডো ছুরি ও ২০ পিস জেলজাতীয় বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম জানান, ‘ধৃত জঙ্গি নেতা আবু রায়হান হচ্ছেন ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া পলাতক জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীর শ্যালক। বর্তমানে ভারতে পলাতক এই সালেহী নিজেকে গ্লোবাল জেএমবির আন্তর্জাতিক আমির ঘোষণা করার পরে জেএমবির আমিরের দায়িত্ব দেওয়া হয় খোরশেদ আলম নামের এক দুর্ধর্ষ জঙ্গির হাতে। পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকের লড়াইয়ে খোরশেদ নিহত হওয়ার পর ২০১৭ সালে আবু রায়হানকে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আমির ঘোষণা করা হয়।
ধৃত জঙ্গিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর কড়া অভিযানের মুখে জেএমবি শহরতলীতে অবস্থানের কৌশল পাল্টে ফের পার্বত্য অঞ্চলে জমি লিজ নিয়ে আস্তানা গড়ে তোলে। গহীন জঙ্গলের সেই সব আস্তানায় নিজেরা আশ্রয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে তুলেছিল তারা। পাহাড়ী এলাকায় মানুষের যাতায়াত কম থাকায় জঙ্গিরা ওই এলাকাকে নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছে বলেও জানান মনিরুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গিরা কার মাধ্যমে কিভাবে জমি লিজ নিয়েছিল, তা খুঁজে বের করা হচ্ছে। আপাতত আমরা একজনকে চিহ্নিত করেছি, তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সূত্র জানা গেছে, জেএমবি নেতা আবু রায়হান টঙ্গীতে একটি মাদরাসায় লেখাপড়া করতে এসে ২০১০ সালে জেএমবিতে যোগ দেয়। সংগঠনের প্রতি বিশ্বস্ততার পুরষ্কার হিসেবে তাকে ২০১২ সালে দাওয়াতি শাখার প্রধানের দায়িত্ব নিয়ে দাওয়াতি কাজ করতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপরে কক্সবাজার থেকে পাহাড়ী এলাকায় অবস্থান নেন আবু রায়হান।

মনিরুল ইসলাম বলেন, যদিও এই মুহূর্তে নব্য জেএমবি ও পুরনো জেএমবি অথবা আনসার আল ইসলাম কারোরই হামলা চালানোর মতো শক্তি সামর্থ নেই, সবার কর্মকা- নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কিছুদিন আগে ঢাকা শহরের ৫টি জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল তারা। পুলিশ তাদেরও খুঁজে বার করেছে। এই অপকর্মের হোতা ছিল নব্য জেএমবির একটি সেল। ওই একই সেল ৫ জায়গায় পুলিশের উপর হামলা করেছিল। তাদের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ফলে আর কেউ খুব কাছাকাছি সময়ে হামলা করবে এরকম কোনো তথ্য নেই সিটিটিসির কাছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা সব সময়ই হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। তবে তাদের গতিবিধি নজরদারিতে থাকায় তারা দৌড়ের ওপর রয়েছে। জঙ্গি সংগঠনগুলির বর্তমান অবস্থা এমন হয়েছে যে, সমর্থক আছে তো, তাদের নেতা নেই। আবার নেতা থাকলেও ক্যারিশম্যাটিক নেতা নেই। ফলে, একটি হামলার জন্য এবং একটি সংগঠন পরিচালনার জন্য যাকে দরকার তার অভাব রয়েছে। তবে রেডিক্যালাইজেশনের মাত্রা বেড়েছে। সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলিতে লক্ষ্য করলে বোঝা যায়। এই রেডিক্যালাইজড ব্যক্তিদের এক্সট্রিম পর্যায়ে নিয়ে জঙ্গিতে পরিণত করতে সমস্যা হচ্ছে। /পূর্বকোণ